আনন্দ

আনন্দ
– সঞ্জয় গায়েন

 

যে শুনছে সেই বলছে, ছিঃ! বাপ হয়ে নিজের একমাত্র ছেলের জন্য ওই কটা টাকা খরচ করতে রাজী হচ্ছে না! জানতাম, রাধানাথ সাঁতরা কৃপণ। কিন্তু এ তো দেখছি, কসাই! কি করবি টাকা রেখে দিয়ে? নিজের ছেলের শেষ যাত্রায়… খরচ করতে কেউ ভাবে নাকি! আরে বাবা, যাদের যেটা প্রাপ্য দিতে তো হবেই। দেশের নিয়ম মেনে না চলে উপায় আছে ? তাছাড়া সবাই যেটা মেনে নেয় তুমি সেটা মানবে না কেন? প্রতিবাদ! কিসের প্রতিবাদ? সকলে তো রাধানাথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এখন। আহাঃ বেচারা ছেলেটা! অ্যাক্সিডেন্টে মরেও শান্তি পেল না! ওই নিষ্ঠুর বাপটার জন্য। আচ্ছা, পুলিশ কি এমন দোষ করেছে শুনি? রাস্তাঘাটে বেপরোয়া বাইক চালিয়ে মরার বেলা হুঁশ ছিল না? ঝামেলা এড়াতে পুলিশ বডি আটকে হাজার কুড়ি টাকা নিয়ে রফা করতে চেয়েছিল। তা উনি দেবেন না। বলে, আইন মেনে বডি নিয়ে যাব। শোনো কথা। আইনের মারপ্যাঁচ কতটুকু বোঝে? তবু, পুলিশকে ভাল বলতে হয়। টাকা না পেয়েও বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়েছিল।
মর্গে গিয়েও রাধানাথা ঝামেলা জুড়ে দিল। কাটাছেঁড়া বিনা পয়সায় করে দিল। কিন্তু সেলাই করতে হাজার আষ্টেক আর বডিটা গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য হাজার দুয়েক… মাত্র দশহাজার তাও তর্কাতর্কির জন্য হাজারখানেক কমিয়েছিল। কিন্তু ওনার এক গোঁ। সরকারী নিয়মের বাইরে একটাকাও বেশি দেবে না! ভাবতে পারছ? মাত্র ওই কটা টাকার জন্য ছেলেটা কাটা লাশ হয়ে মর্গে পড়ে! তি-ই-ন দিন। আর একটা তো বলাই হয় নি। বরফ। সামান্য দুহাজার টাকা। দিল না। বরফের অভাবে ছেলেটা পচে গেল। শুনলাম, পুলিশও নাকি বলেছে, দেখি কত ক্ষমতা! টাকা ছাড়া লাশ নিয়ে যায় কি করে!
তবে এসবের চেয়েও, আশ্চর্যের কথা কি জান? একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে চোখে একফোঁটা জল নেই! কী পাষাণ্ড! ভাবতে পারছ? নাঃ নাঃ! পাথর হতে যাবে কেন? গভীর শোকের চিহ্ন থাকলে ঠিক চোখে পড়ত। থাক, এবার যখের ধন আগলে। বলি ভোগ করবে কে?
তারপর কি হল?
দূর, দূর, কে রোজ রোজ কাজ কামাই করে খোঁজ নিতে যাবে। তবে কি আর হবে? নিশ্চয় শেষমেষ গোপনে কিছু একটা রফা করে নিয়েছিল। বড়লোকদের ব্যাপার। সব কি আর জানা সম্ভব!
ইচ্ছে থাকলেই জানা যায়। এই যেমন আমি। শহরে থেকেও রাধানাথবাবুর সব খবর জানি। আপনি যা বললেন তার শেষটুকু আমি বলি শুনুন। উনি সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কে চিঠি দিয়েছিলেন। তারপর হোম সেক্রেটারির তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে উনি ছেলে কে পেয়েছিলেন। আর ওই কৃপণ লোকটা নিজের দোতলা বাড়ি সরকারকে লিখে দিয়েছেন। আপনাদের গ্রামে হাইস্কুল করার জন্য। আমি এসেছি সবকিছু সরজমিনে দেখতে। স্কুলের নাম কি হবে শুনবেন? আনন্দ শিক্ষা নিকেতন। ওঁর একমাত্র ছেলের নামে।

Loading

Leave A Comment